একটি পরমাণুর ইলেকট্রনিক বিন্যাস হল তার ইলেকট্রনগুলি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারপাশে ভিন্ন শক্তি স্তর ও উপ-শক্তি স্তরে কীভাবে বিন্যস্ত আছে তা বর্ণনা করা। একটি পরমাণুর ইলেকট্রনিক বিন্যাস তার অনেক পদার্থিক ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য, যেমন অন্যান্য পরমাণুর সঙ্গে কীভাবে এটি বিক্রিয়া করে, কীভাবে এটি বিদ্যুৎ পরিবহন করে, এবং কীভাবে এটি একটি চৌম্বক ক্ষেত্রে আচরণ করে, তা নির্ধারণ করে।
ইলেকট্রন হল একটি ঋণাত্মক চার্জযুক্ত উপ-পরমাণু কণা যা পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। নিউক্লিয়াস ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্রোটন এবং নিরপেক্ষ চার্জযুক্ত নিউট্রন দ্বারা গঠিত। নিউক্লিয়াসে প্রোটনের সংখ্যা একটি উপাদানের পারমাণবিক সংখ্যা নির্ধারণ করে, এবং একটি নিরপেক্ষ পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা প্রোটনের সংখ্যার সমান।
ইলেকট্রনের তুলনায় প্রোটন এবং নিউট্রনের ভর খুব বেশি, এবং তারা তাদের কক্ষপথে খুব দ্রুত চলে। কক্ষপথগুলি বৃত্তাকার পথ নয়, বরং এমন অঞ্চল যেখানে ইলেকট্রন পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এই অঞ্চলগুলিকে কক্ষপথ বা উপ-কক্ষ বলা হয়, এবং তাদের আকার ও আকৃতি তাদের শক্তি স্তরের উপর নির্ভর করে।
শক্তি স্তর হল একটি প্রধান কক্ষ বা কক্ষপথ যা এক বা একাধিক উপ-কক্ষ বা কক্ষপথ ধারণ করে। একটি কক্ষপথের শক্তি স্তর নিউক্লিয়াসের সাথে তার দূরত্ব দ্বারা নির্ধারিত হয়: যত কাছে থাকবে, তত কম শক্তি; যত দূরে থাকবে, তত বেশি শক্তি।
শক্তি স্তরগুলি 1 থেকে 7 পর্যন্ত নাম্বার দেওয়া হয়, নিউক্লিয়াসের কাছে থেকে শুরু করে। প্রথম শক্তি স্তর 2 টি ইলেকট্রন, দ্বিতীয় 8, তৃতীয় 18 ইত্যাদি ধারণ করতে পারে। একটি শক্তি স্তরে ইলেকট্রনের সর্বাধিক সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র 2n^2, যেখানে n হল শক্তি স্তরের নাম্বার।
উপ-কক্ষ হল একটি শক্তি স্তরের একটি উপ-বিভাগ যা এক বা একাধিক একই আকার ও শক্তির কক্ষপথ ধারণ করে। উপ-কক্ষগুলি অক্ষর দ্বারা নামকরণ করা হয়: s, p, d, f, g, ইত্যাদি, যা কক্ষপথ কোয়ান্টাম সংখ্যা 0, 1, 2, 3, 4, ইত্যাদি দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হয়। একটি শক্তি স্তরে উপ-কক্ষের সংখ্যা শক্তি স্তরের নাম্বারের সমান: যেমন, প্রথম শক্তি স্তরে একটি উপ-কক্ষ (s), দ্বিতীয় দুটি (s এবং p), তৃতীয় তিনটি (s, p, এবং d), ইত্যাদি।
একটি উপ-কক্ষে সর্বাধিক ইলেকট্রনের সংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র 2(2l + 1), যেখানে l হল কক্ষপথ কোয়ান্টাম সংখ্যা। উদাহরণস্বরূপ, s উপ-কক্ষ 2 টি ইলেকট্রন, p উপ-কক্ষ 6, d উপ-কক্ষ 10, এবং f উপ-কক্ষ 14 ধারণ করতে পারে।
কক্ষপথ হল একটি উপ-কক্ষের মধ্যে এমন একটি অঞ্চল যেখানে একটি ইলেকট্রন নির্দিষ্ট সম্ভাবনায় পাওয়া যায়। একটি কক্ষপথের আকার ও আকৃতি তার শক্তি স্তর এবং উপ-কক্ষের উপর নির্ভর করে: উদাহরণস্বরূপ, s কক্ষপথ গোলাকার, p কক্ষপথ ডাম্বেল-আকৃতি, d কক্ষপথ ক্লোভার-আকৃতি বা জটিল-আকৃতি, এবং f কক্ষপথ আরও জটিল।
প্রতিটি কক্ষপথ 2 টি ইলেকট্রন ধারণ করতে পারে, যাদের স্পিন বিপরীত: একটি ঘড়ির দিকে এবং অন্যটি ঘড়ির বিপরীত দিকে। স্পিন হল ইলেকট্রনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য যা তাদের চৌম্বকীয় আচরণে প্রভাব ফেলে।
একটি পরমাণুর ইলেকট্রনিক বিন্যাস লিখতে হলে সব বস্তান্ত উপ-কক্ষগুলি তাদের ইলেকট্রনের সংখ্যা সূচক হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোজেন (H) এর ইলেকট্রনিক বিন্যাস 1s^1; হিলিয়াম (He) এর ইলেকট্রনিক বিন্যাস 1s^2; লিথিয়াম (Li) এর ইলেকট্রনিক বিন্যাস 1s^2 2s^1; ইত্যাদি।
উপ-কক্ষগুলি ভর্তি করার ক্রম একটি নিয়ম অনুসরণ করে, যাকে আফবাউ নীতি বা গঠন নীতি বলা হয়: ইলেকট্রন প্রথমে সবচেয়ে কম-শক্তির কক্ষপথগুলি ভর্তি করে এবং তারপর বেশি-শক্তির কক্ষপথগুলি ভর্তি করে।
আফবাউ নীতি ব্যবহার করে একটি পরমাণুর ইলেকট্রনিক বিন্যাস লিখতে হলে আমাদের নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে:
সবচেয়ে কম-শক্তির কক্ষপথ, যা 1s কক্ষপথ, দিয়ে শুরু করুন এবং এতে সর্বোচ্চ 2 টি ইলেকট্রন ভর্তি করুন।
পরবর্তী সবচেয়ে কম-শক্তির কক্ষপথ, যা 2s কক্ষপথ, দিয়ে চলুন এবং এতে সর্বোচ্চ 2 টি ইলেকট্রন ভর্তি করুন।
পরবর্তী সবচেয়ে কম-শক্তির কক্ষপথ, যা 2p কক্ষপথ, দিয়ে চলুন এবং এতে সর্বোচ্চ 6 টি ইলেকট্রন ভর্তি করুন।
এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখুন যতক্ষণ না পর্যন্ত পরমাণুর সব ইলেকট্রন কক্ষপথগুলিতে ভর্তি হয়।